ঘোমটার নারী শিল্পে নগ্ন
পৃথিবীতে নারী আর পুরুষ দিয়ে ই সব তৈরী , বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। নারী আর পুরুষের চাহিদা সমান আর অধিকার ও সমান ,কিন্তু পৃথিবীতে যত সব শিল্প হয়েছে সব গুলো ই পুরুষের মনোবৃত্তির দিকে তাকিয়ে সৃষ্টি হয়েছে। শিল্প গুলো ও পুরুষদের ভোগের জন্য এক চেটিয়া করা হয়েছে ,যেন অনুভূতি আর অনুভব করবার ক্ষমতা বা অধিকার শুধু পুরুষদের ই আছে। একটা নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নারীকে শিল্পায়ন করে সেটা পুরুষের মস্তিস্ক থেকে হরমোন নিঃসরণের বিশেষ ব্যবস্থা আছে ,কিংবা পুরুষের কামনা বা ভাবনা জাগ্রত করবার একঘেয়েমি প্রত্যয়। যৌনতা হোক বা শিল্প হোক সেটা যেন পুরুষদের এই যেন অধিকার। নারী শোষণে ও পুরুষ এগিয়ে ,নারী শিল্পে ও পুরুষ এগিয়ে। কিভাবে নগ্ন করলে ,কতটুকু নগ্ন করলে ,কতটা স্বচ্ছ বা আবছা পোশাক নারীকে পরিধান করিয়ে ,ছিন্ন বস্ত্র নাকি শীর্ণ বস্ত্র ,সিক্ত বস্ত্র নাকি বস্ত্র হীন বক্ষ একটা পুরুষের চোখে কতখানি ভালো লাগে এই নারী শিল্পে চলে তারই প্রতিযোগিতা ,নারী যতখানি রমণী তার থেকে বেশি রমণীয় করেছে এই পুরুষ সমাজ ,এরা নরম তুলে তুলে তাই এদেরকে শো কেসে রেখে দেওয়া হোক ,বোরখা দিয়ে বা ঘোমটা দিয়ে মুড়ে রাখা হোক ,যিনি কিনতে পারবেন তিনিই মোড়ক খুলতে পারবেন কারণ সিল খুলে দিলে পরে আর কোনো পুরুষ দাম দেবেন না। কিন্তু আপনি যে নারীর সৌন্দর্য নিয়ে আপ্লুত হয়ে শো কেসে সাজিয়ে রাখলেন সেই নারীর মস্তিস্ক থেকে হরমোন সঞ্চালনার জন্য বা তার ভাবনা বা কামনা জাগ্রত করবার জন্য কি শিল্প করেছেন ? একজন নারীর সামনে নগ্ন নারী মূর্তি কি শিল্পের রসে সিক্ত করতে পেরেছে ? নারী তার নিজের শরীর নিজে দেখাকে শিল্প মনে করে না ,কারণ আত্ম দর্শন কোনো শিল্প নয় ,আত্ম দর্শন হলো এক চূড়ান্ত বাস্তবিকতা আর বাস্তবিকতার মধ্যে কোনো রহস্য বা কল্পনা বা রম্য থাকে না। মাছের তেল দিয়ে মাছ ভেজে কিংবা মাকে মাসির গল্প শুনিয়ে নারীকে মনের খোরাক জোগাতে চায় পুরুষ শিল্পীগণ কিন্তু নারীর কাছে নারী শরীরের কোনো রহস্যময়িতা থাকে না তাই এতে নারী আপ্লুত না হয়ে বিরক্ত বা লজ্জিত হয় অথবা নিজের শরীরের সাথে শিল্পায়িত নারী মূর্তির কিছু তুলনা করতে পারে মাত্র। বিতর্কিত সমকামী ছাড়া কোন নারীর শয়ন ঘরে নগ্ন নারী মূর্তি খুঁজে পাওয়া যাবে না ,কিন্তু অনেক পুরুষের ঘরে নগ্ন নারী মূর্তি সগৌরবে বিরাজিত । পুরুষ একজন শিল্পী হলেও পুরুষের মন ছাড়া আর কিছু বুঝে উঠতে পারেনি তাই শুধুমাত্র পুরুষের মনের খোরাক এই নগ্ন নারী মূর্তির ছড়াছড়ি ,পুরুষ শিল্পী তার নিজের শরীরের সৌন্দর্য খুঁজে পায়না কারণ কাছের জিনিসে কল্পনা, রহস্য থাকে না তবে এটুকু যখন একজন পুরুষ শিল্পী বুঝতে পারেন তবে তিনি একজন নারীর অনুভূতি ও বুঝতে পারার কথা। পুরুষের চোখে যদি নগ্ননারীকে শিল্প বানানো যায় তবে নারীর চোখে ও পুরুষের নগ্ন শরীর একটি নিশ্চিত শিল্প ,কিন্তু এটি নিশ্চিত ভাবে এতই বিরল যে পুরুষকে কোনো শিল্পী যেন ভুল করে শিল্পে নগ্ন করেছেন ,এদিকে শিল্পে যেন নারীর নগ্নতা ই কাম্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু যে পুরুষ সমাজ নারী কে তার ঘোমটা খুলতে পর্যন্ত দেয়না আবার সেই পুরুষ তাদের শিল্পকলায় নারীকে পোশাক পরার অধিকার টুকু যেন কেড়ে নিতে চায়।পুতুলের মতো ইচ্ছে করে পুরুষ নারীর পোশাক বদলায় কখনো আবৃত কখনো অনাবৃত কিন্তু এসব অধিকার নারীর নিজের নেই একচেটিয়া পুরুষের। বোঝা যায় মানোরঞ্জনেরজন্য পুরুষ নারীকে নগ্ন করে অথচ তাকে বাস্তবে রাখা হয় ঘোমটায় কিম্বা বোরখায় মুড়ে আর ইচ্ছে হলে ক্রীত পণ্যের মতো খুলে দেখা। এভাবে পুরুষের মানসিক ক্ষুধা ই নারীকে শিল্পে-কল্পনায় কদর্য করে যাচ্ছে , যদিও শিল্প সমাজ পুরুষের মানসিক ক্ষুধা কে এখানে মার্জিত ভাবে শৈল্পিক ক্ষুধা বলে চালিয়ে দেয় । পৌরাণিক কাল থেকে চলছে শিল্পের মধ্যে ও শৈল্পিক অসাম্য।এই অসাম্য দূরীকরণ কোনো পুরুষ কে দিয়ে হবে না। আসুক আগামী দিনের নারী শিল্পী যিনি পুরুষ শরীরের শৈল্পিক সৌন্দর্য আবিষ্কারের অপূর্ব নেশায় মেতে থাকবেন , কারণ - বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। ( লেখক ভক্তিভিক্ষু ড.অভয় বালা - Founder Writer of AbhayKantho dotCom )
leave a reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *